বলা হচ্ছে আগামীতে আউটসোর্সিং হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়ের উতস, কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় যায়গা। তারপরও যারা একাজ করবেন তারা অনেকেই অন্ধকারে রয়ে গেছেন। অনেকেই জানেন না ঠিক কি করবেন। কি যোগ্যতা প্রয়োজন হবে, কি কি যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হবে, কি কাজ করতে হবে, কাজ কোথায় পাওয়া যাবে, কত টাকা পাওয়া যাবে, কিভাবে পাওয়া যাবে।
এই প্রশ্নগুলির উত্তর ধারাবাহিকভাবে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে এখানে।
প্রথমেই একটা কথা পরিস্কার করে নেয়া ভাল। বলা হচ্ছে কাজ করে অর্থ উপার্জনের বিষয়ে। কাজেই আপনাকে কাজ করতে হবে, সে কাজ শিখতে হবে, অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে। আপনার দক্ষতা যত বেশি অর্থ উপার্জনের সুযোগ তত বেশি। এটাই একমাত্র পথ। যদি কাজ শিখতে এবং করতে পর্যাপ্ত আগ্রহ এবং চেষ্টা না থাকে তাহলে সময় নষ্ট না করাই ভাল। সহজে অর্থ উপার্জন বলে যা বুঝানো হয় তা আসলে ততটা সহজ না।
আউটসোর্সিং কি ?
এটা নিশ্চয়ই প্রথম প্রশ্ন। উত্তর হচ্ছে, বাড়িতে বসে অন্য কারো কাজ করা। উন্নত দেশগুলিতে (আমেরিকা কিংবা ইউরোপ) মজুরী অত্যন্ত বেশি। কোন কোম্পানীর যদি নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম তৈরী প্রয়োজন হয়, এজন্য যদি একজন প্রোগ্রামার নিয়োগ করতে হয় তাহলে বিপুল পরিমান টাকা গুনতে হয়। সেকাজটিই অন্য দেশের প্রোগ্রামার দিয়ে করিয়ে নিলে তুলনামুলক কম টাকায় করানো যায়। বর্তমান ইন্টারনেট ব্যবস্থায় খুব সহজে একাজ করা সম্ভব। আপনি সেই প্রোগ্রামার, ডিজাইনার, এনিমেটর অথবা যাই হোন না কেন ইন্টারনেটের মাধ্যমেই তাদের কাজ করতে পারেন, ঘরের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
বড় কোম্পানীর বদলে ছোট কোম্পানী, কিংবা ব্যক্তি পর্যায়ের কাজের কথা যদি এরসাথে যোগ করা হয় তাহলে কাজের পরিধি বেড়ে যায় অনেক। ধরুন কোন ব্যক্তির একটি ওয়েবসাইট তৈরী করা প্রয়োজন। তিনি নিজে সেকাজ পারেন না। কাজেই তার প্রয়োজন এমন একজন ব্যক্তি যিনি সেকাজ করে দেবেন। আপনি যদি সেকাজে দক্ষ হন তাহলে আপনি আগ্রহি হয়ে সেখানে যোগাযোগ করলেন। সমঝোতা হল, আপনি কাজটি করে দেবেন, বিনিময়ে ১০০ ডলার পাবেন। লাভ দুজনেরই।
কাজেই, আউটসোর্সিং হচ্ছে এক যায়গার কাজ অন্যযায়গা থেকে করিয়ে নেয়া। এই কাজকে সহজ করার জন্য অনেক প্রতিস্ঠান রয়েছে। তাদের ওয়ের সাইটে বিনামুল্যে সদস্য হওয়া যায় (আপনাকে বিনামুল্যে সেবা দিয়েও তারা নিজেরা লাভ করেন। সে হিসেব আলাদা)।
তাদের সদস্য দুধরনের, একপক্ষ কাজ দেন, আরেকপক্ষ কাজ করেন। আপনি যখন কাজ দেবেন তখন কাজের বিবরন, সময়, অর্থের পরিমান ইত্যাদি তাদের জানাবেন। তারা ওয়েবসাইটে সেগুলি রেখে দেবেন যারা কাজ করতে আগ্রহি তাদের জন্য।
আপনি যত কাজ করবেন তখন তাদের ওয়েব সাইটে গিয়ে সেই তালিকা থেকে নিজের পছন্দমত কাজের জন্য আবেদন করবেন (সাধারনত একটি লিংকে ক্লিক করাই যথেষ্ট)। যার কাজ তিনি আবেদনগুলি যাচাই করে যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকে কাজটি দেবেন। আপনি সেই ব্যক্তি হলে কাজটি করে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই তারকাছে পাঠিয়ে দেবেন। সাথেসাথে আপনার একাউন্টে কাজের অর্থ জমা হবে।
কাজের ধরন
একটু আগে দুধরনের কাজের কথা বলা হয়েছে, একটি কোম্পানীর, অপরটি ছোট কোম্পানী কিংবা ব্যক্তির। আউটসোসিং এর কাজ মুলত এই দুধরনের। বড় কোম্পানীর বড় কাজ করার জন্য বড় প্রতিস্ঠান প্রয়োজন। সেখানে আপনি একজন নিয়মিত কর্মী হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। আপনি ফ্রিল্যান্সার নন।
আর ছোট কাজের ক্ষেত্রে আপনি নিজেই সবকিছু। যোগাযোগ, কাজ করা, অর্থ গ্রহন সবকিছু করতে হবে নিজেকেই। অবশ্য কয়েকজন একসাথে শুরু করে ক্রমাম্বয়ে বড় কোম্পানীতে পরিনত হওয়া অবশ্যই সম্ভব।
ধরে নেয়া হচ্ছে আপনি একা কাজ করতে আগ্রহি। এখানে সে সম্পর্কিত তথ্যই উল্লেখ করা হচ্ছে।
এক কথায়, কম্পিউটার ব্যবহার করে যাকিছু করা সম্ভব সবধরনের কাজই পাওয়া যায় এভাবে। গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব পেজ তৈরী, ওয়েব পেজের কোন সমস্যার সমাধান থেকে শুরু করে এনিমেশন, ভিডিও এডিটিং কিংবা একেবারে সহজ ডাটা এন্ট্রি পর্যন্ত। কাজ যত সহজ অর্থের পরিমান তত কম, কাজ যত জটিল অর্থের পরিমান তত বেশি এই নিয়মে।
উদাহরন হিসেবে ওয়েব সাইটের জন্য ফটোশপে একটি ব্যানার বিজ্ঞাপন তৈরী করে যে পরিমান অর্থ পাবেন ফ্লাশে এনিমেটেড ব্যানার তৈরী করে পাবেন তারথেকে অনেক বেশি অর্থ। বাস্তব ধারনা পাওয়ার সবচেয়ে ভাল পথ হচ্ছে এধরনের ওয়েবসাইটে গিয়ে কাজের তালিকা দেখা।
কি শিখতে হবে ?
কোন কাজ আপনার জন্য ভাল সেটা যাচাইয়ের দায়িত্ব আপনার। আগ্রহ কোন বিষয়ে, দক্ষতা কোন বিষয়ে, কতদুর পর্যন্ত যেতে পারবেন এগুলি একমাত্র আপনিই জানতে পারেন। কোন কাজে অর্থ বেশি এটা বিচার করে সেই কাজ করতে না যাওয়াই ভাল। প্রোগ্রামার হওয়ার জন্য একধরনের প্রতিভা প্রয়োজন, এনিমেটর হওয়ার জন্য আরেক ধরনের, ভাল ডিজাইনার হওয়ার জন্য আরেক ধরনের। কোন বিষয়ে আগ্রহি হলে সে বিষয়ে খোজ নিন, কিছুদিন চেষ্টা করুন, তারপর দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিন। এবিষয়েও সত্যিকারের সাহায্য পাবেন এধরনের জব সাইটে। প্রতিটি কাজের বর্ননার সাথে কোন সফটঅয়্যারে দক্ষতা থাকতে হবে তা উল্লেখ করা থাকে।
কত আয় করা সম্ভব ?
বিষয়টি পুরোপুরি আপনার কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে। অধিকাংশ কাজের হিসেব হয় ঘন্টা হিসেবে। গ্রাফিক ডিজাইনকে উদাহরন হিসেবে ধরলে মাসে অনায়াসে হাজার ডলার আয় করা সম্ভব। প্রোগ্রামার হলে অনেক বেশি।
কি যন্ত্রপাতি প্রয়োজন ?
এধরনের কাজে আপনার মুল অস্ত্র হচ্ছে মেধা। কাজেই দামী যন্ত্রপাতি নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন হয় না, বিশেষ কাজ ছাড়া। কাজের ধরন অনুযায়ী অবশ্যই আপনার স্ক্যানার, গ্রাফিক ট্যাবলেট, দামী ক্যামেরা ইত্যাদি প্রয়োজন হতে পারে। এধরনের বিশেষ যন্ত্র বাদ দিলে আপনার প্রয়োজন একটি মোটামুটি পর্যায়ের কম্পিউটার এবং ভাল ইন্টারনেট সংযোগ।
বর্তমানে যথেষ্ট কম টাকায় ভাল কম্পিউটার পাওয়া যায়। আর ইন্টারনেট সংযোগের বিষয়ে বলা আসলে অর্থহীন। তারা আশা করে আপনি টাকা দেবেন, বদলে কি পাবেন তাতে তাদের কিছু যায়-আসে না। আর সরকার কিংবা প্রশাসন যত বক্তৃতা-বিবৃতি দিক না কেন, ব্যবসায়িদের কাছে সবসময় মাথা নিচু করে থাকে।
মুল কথায় ফেরা যাক। ইন্টারনেটে কাজ করে অর্থ উপার্জনের এটা প্রাথমিক তথ্য। শুরুতেই আপনি যা করতে পারেন তা হচ্ছে এধরনের ওয়েবসাইটে গিয়ে বিস্তারিত পড়া, বোঝার চেষ্টা করা। সত্যিকাজের কাজের তথ্য তাদের কাছেই পাওয়া সম্ভব, অকারনে অন্য যায়গায় সময় নষ্ট করবেন না।
odesk,
freelancer এধরনের জনপ্রিয় ওয়েব সাইটের উদাহরন। সার্চ করলে এধরনের আরো বহু সাইট পাবেন। ভালভাবে বোঝার জন্য কয়েকদিন নিয়মিত এই সাইটগুলিতে সময় কাটান।
কাজ শুরু করুন, সেইসাথে আরো জানার চেষ্টা করুন।
টাকা কিভাবে হাতে পাবেন ?
ইন্টারনেটে কাজ করে অর্থ উপার্জনের জন্য আপনার পক্ষে যাকিছু করা সম্ভব সবই আপনি করলেন। যা জানা প্রয়োজন জানলেন, টাকা খরচ করে ইন্টারনেট সংযোগ নিলেন, ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আউটসোর্সিং সাইটে গিয়ে কাজ নিলেন, সেটা করে জমাও দিলেন। এরপর আপনার হিসেবের পালা। আপনি টাকা পাবেন কিভাবে। এখানে যেহেতু আপনার সব ইচ্ছাই যথেষ্ট না সেহেতু আগেই হিসেব করে নেয়া ভাল।
আগে দেখে নেয়া যাক তারা দেয় কিভাবে।
সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে ভিসা-মাষ্টারকার্ডের মত ক্রেডিট কার্ড। তারা আপনার নামে টাকা জমা দিতে পারে সাথেসাথেই, আপনিও সাথেসাথেই সেটা পাবেন। উন্নত দেশগুলিতে মানুষ কেনাকাটা থেকে শুরু করে ট্যাক্সিভাড়া পর্যন্ত দেয় ক্রেডিটকার্ডের মাধ্যমে। কাজেই তারা এই পদ্ধতি বেশি ব্যবহার করবে সেটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্ন। এখানে ক্রেডিট কার্ড নামের একটি বস্তু পকেটে নিয়ে বেড়াতে পারেন, টাকার বদলে সেটা দিতে পারেন না। সেটা থেকে টাকা বানিয়ে সেই টাকা নিয়ে দোকানে ঢুকতে হয়।
আরেক পদ্ধতি হচ্ছে পে-পল এর মত অর্থ লেনদেনকারী প্রতিস্ঠানের সাহায্য নেয়। শুধুমাত্র ইমেইল ব্যবহার করে বিনামুল্যেই সেখানে একাউন্ট খোলা যায়। টাকা আপনার একাউন্টে জমা হবে। আপনি স্থানীয় ব্যাংক থেকে সেটা উঠিয়ে নেবেন। এই পদ্ধতিও তুলনামুলক দ্রুতই।
বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে পে-পল ব্যবহারে সরকারের অনুমতি নেই। পে-পল ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের নাম খুজে পাবেন না। এবিষয়ে সরকারের সর্বশেষ বক্তব্য, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আপনি এই আশ্বাসের ওপর নির্ভর করে অপেক্ষা করে জীবন পার করতে পারেন।
আরেক পদ্ধতি হচ্ছে অয়্যার ট্রান্সফার। ওয়েষ্টার্ন ইউনিয়নের মত প্রতিস্ঠানের মাধ্যমে টাকা গ্রহন করা যায়। এই পদ্ধতিও বেশ দ্রুত। তবে এজন্য টাকা দিতে হয়।
আরেক পদ্ধতি হচ্ছে প্রচলিত ব্যাংক চেক গ্রহন করা। তারা আপনার নামে চেক পাঠাবে আপনি সেই চেক ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে টাকা উঠাবেন। এতে সময় বেশি প্রয়োজন হয়, চেকের জন্য আলাদা ফি দিতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা, সকলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে না। আপনি যদি গুগলের কাছে টাকা পান তারা আপনার নামে চেক পাঠাবে, ছোট প্রতিস্ঠান কিংবা ব্যক্তিগত পর্যায়ে সাধারনত এই ঝামেলায় যাবে না। কাজেই আপনার সামনে সুযোগ খুব বেশি নেই।
এবারে দেখা যাক যারা ইতিমধ্যে কাজ করছেন তারা কি করেন।
কেউ কেউ অন্যের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন। অর্থাত পরিচিত কারো ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুযোগ থাকলে তার নাম্বার ব্যবহার করে সেখানে টাকা জমা করা। তাকে অবশ্যই এতটা বিশ্বস্ত হতে হয় যে টাকার হিসেবে গড়মিল করবে না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে উন্নত দেশগুলিতে সবধরনের লেনদেন যাচাই করা হয়। যদিও বিষয়টি অবৈধ পর্যায়ে যায় না তাহলেও অনেকেই ঝামেলায় যেতে চান না।
পে-পল ব্যবহার যেহেতু সহজ বলে অন্য দেশে করা পে-পল একাউন্ট ব্যবহার করেন কেউ কেউ। এখানেও সমস্যা একই। আপনার নিজেকেই বিদেশে একাউন্ট করতে হয় অথবা অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। পে-পলের নিয়ম অনুযায়ী একজনের একাউন্ট অন্যজন ব্যবহার নিষিদ্ধ। তারা জানলে একাউন্ট বন্ধ করে দেবে।
এলার্ট-পে আরেকটি জনপ্রিয় পদ্ধতি যা খুব সহজে ব্যবহার করা যায়। পিটিসি সাইট এবং এফিলিয়েশন এর পেমেন্ট সাধারনত এভাবে নেয়া যায়। ওডেস্ক,ফ্রিল্যান্সার, স্ক্রিপ্টল্যান্স এই পদ্ধতি ব্যবহার করে না। যেখানে এার্ট-পে ববহার করা যায় সেখানে এলার্ট পে ব্যবহার করুন। এখানে ক্লিক করে সদস্য হতে পারেন।
বাংলাদেশে যারা কাজ করেন তাদের প্রচলিত একটি পদ্ধতি হচ্ছে মানিবুকারস ব্যবহার করা। মানিবুকারস (www.moneybookers.com) পে-পলের মত একই ধরনের সেবা দেয়। তাদের সেবার মানও উন্নত (পে-পলের বিরুদ্ধে নানারকম অভিযোগ রয়েছে)। যেহেতু অনেকেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করছেন সেহেতু এটাই ভালভাবে জেনে নিন।
আপনার প্রয়োজন স্থানীয় একটি ব্যাংক একাউন্ট। ব্যাংকের কাছে আগে জেনে নিন তারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কি-না। ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে এই পদ্ধতিতে টাকা উঠানো যায় এটুকু নিশ্চিত করতে পারি।
প্রয়োজন একটি ইমেইল এড্রেস।
এটুকুই। এরপর মানিবুকারস সাইটে গিয়ে নিজের তথ্য দিয়ে নামে একটি একাউন্ট খুলুন। আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনের জন্য সুইফট কোড নামে একটি কোড ব্যবহার করা হয়। ডাচবাংলা ব্যাংকের জন্য এই কোড DBBLBDDH। অন্য ব্যাংক হলে সেই ব্যাংকের কোড জেনে নিন। এই কোড ব্যবহার করে ব্যাংক একাউন্ট যোগ করুন।
মানিবুকারস এ একাউন্ট তৈরীর কোন খরচ নেই।
টাকা জমা হলে মানিবুকারস ওয়েব সাইটের উইথড্র থেকে টাকা উঠানোর চেষ্টা করুন। আপনাকে ঠিকানা/ব্যাংক ভেরিফাই করতে বলবে। সেটা করুন। অথবা, ভেরিফিকেশন ছাড়া ১৫ ডলার উঠানো যায়, কাজেই ১৫ ডলারের নিচে উঠান। তারা আপনার ব্যাংকে ভেরিফিকেশন কোড পাঠাবে।
আপনার ব্যাংকে এই তথ্য যেতে ১ থেকে ২ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। ব্যাংকে গিয়ে আপনার কোডটি নিন এবং মানিবুকারস এর সাইটে গিয়ে সেটা ব্যবহার করুন।
এরপর প্রতি ৯০ দিনে ২০০০ ডলারের বেশি পর্যন্ত গ্রহন করতে পারবেন এই একাউন্ট ব্যবহার করে। অর্থের পরিমান যাই হোক, মানিবুকারস প্রতি লেনদেনের জন্য ২.১৬ ডলার কেটে রাখবে সার্ভিস চার্জ হিসেবে। এটা সামান্যই।
অর্থ গ্রহনের আরেকটি সহজ পথ হচ্ছে এলার্ট-পে। এখানে খুব সহজে একাউন্ট করা যায়, সেখানে টাকা জমা হলে ব্যাংক থেকে উঠানো যায় বা ইন্টারনেটে খরচ করা যায়। একাউন্ট করার নিয়ম জেনে নিন এখানে।
প্রতিকুলতা যতই থাক, কাজ করা সম্ভব। চাকরী বা ব্যবসার চিন্তা করে, অন্যের জন্য অপেক্ষায় সময় নষ্ট না করে নিজেই কিছু করার চেষ্টা করুন। অনেকেই করছে।
কিভাবে বেশি কাজ পাবেন ?
আউটসোর্সিং এর জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সাইট ওডেস্ক এর সাম্প্রতিক একটি পরিসংখ্যান দেখুন,
গত ৯০ দিনে তাদের মাধ্যমে কাজ করে মানুষ আয় করেছে ৩ কোটি ৮১ লক্ষ ডলারের বেশি, কাজ জমা পরেছে ৩৬,২৪৩টি, প্রতিটি কাজের জন্য যোগাযোগ করেছে গড়ে ১১.৩ জন।
শেষ সংখ্যাটির দিকে বেশি গুরুত্ব দিন। আপনি সহ ১১ জন হলে বাকি ১০ জনকে প্রতিযোগিতায় পেছনে ফেলে আপনাকে কাজ পেতে হবে। কাজেই আপনাকে দেখাতে হবে আপনি অন্যদের থেকে যোগ্য। কিভাবে সেটা করা সম্ভব দেখে নেয়া যাক।
প্রথম কথা, অবশ্যই দক্ষতা বাড়ানো। যদি গ্রাফিক ডিজাইনকে উদাহরন হিসেবে ধরা যায় তাহলে আপনার প্রয়োজন কাজ ঠিকভাবে করার যোগ্যতা অর্জন করা, ভাল ডিজাইনের বৈশিষ্ট বোঝা, যথেষ্ট পরিমান কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করা। ডিজাইন এমনই একটি বিষয় যে সম্পর্কে প্রত্যেকেরই নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। ফলে একজনের কাছে ভাল মনে হলেও আরেকজনের কাছে ভাল নাও মনে হতে পারে। অনেকেই ভুলে যান অধিকাংশ কাজ হয় ব্যাকরনের মত নিয়ম মেনে। রঙ, কম্পোজিশন, ফন্ট, বক্তব্য সবকিছু মিলিয়ে ভালো ডিজাইন। কখনো ভেবে দেখেছেন কি কোকাকোলা, মাইক্রোসফট এর মত বিশ্বের সেরা লোগোগুলি কত সাধারন। ভালভাবে লক্ষ্য করে দেখুন, শুধুমাত্র লেখা দিয়ে তৈরী এই লোগোগুলি তাদের পরিচিতি সার্থকভাবে তুলে ধরে। কাজেই আপনাকে জটিল কিছু করতে হবে এটা ধরে নেবেন না।
মুলকথা হচ্ছে, ডিজাইন সম্পর্কি বহু বইপত্র পাওয়া যায়। সেখানে যে সুত্রগুলি দেয়া হয়েছে ভালভাবে রপ্ত করা।
ধরে নিচ্ছি আপনি সেটা করেছেন কিংবা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আপনার যোগ্যতা অন্যকে দেখাবেন কিভাবে যদি দেখানোর সুযোগ না পান। সে কথাগুলি উল্লেখ করার জন্যই এই লেখা।
আউটসোর্সিং সাইটগুলি বলে প্রথম কাজ পাওয়া সবচেয়ে কঠিন। ওডেস্কের হিসেবে প্রথম কাজ পেতে আপনার ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত চেষ্টা করতে হতে পারে। আরো ভাল ফল পাওয়ার জন্য এই পদ্ধতিগুলি কাজে লাগান,
আপনার করা ভাল কাজগুলি আপনার প্রোফাইলে জমা রাখুন। সেগুলি দেখে যিনি কাজ দেবেন তিনি আপনার কাজ সম্পর্কে আগাম ধারনা পেতে পারেন।
এধরনের সাইটগুলিতে টেষ্ট দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলি দিন। এতে আপনার রেটিং বাড়বে ফলে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে।
পেশাদারিত্বের পরিচয় দিন। যিনি কাজ দেবেন তার প্রথম লক্ষ্য কাজটি সময়মত হবে, দ্বিতীয়ত কাজটি ভালভাবে হবে, তৃতীয়ত কম টাকায় হবে। এর যে কোনটিতে গড়মিল হলে কাজ পাবেন না। আপনার দায়িত্ব তারকাছ থেকে তিনি ঠিক কি চান সেটা জেনে নিয়ে কাজ করা। এমনভাবে যোগাযোগ করা যেন তিনি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারেন। যে কাজ ভালভাবে করতে পারবেন না সেকাজে কখনো হাত দেবেন না। এতে নিজেরই ক্ষতি।
শুরুতেই অর্থকে গুরুত্ব দেবেন না। এধরনের সাইটে কাজ দুভাবে দেয়া হয়, কোনটিতে নির্দিষ্ট টাকার পরিমান উল্লেখ করা থাকে, কোনটিতে প্রতিযোগিতামুলক দাম উল্লেখ করে অন্যদের পেছনে ফেলতে হয়। সমস্যা হচ্ছে, আপনি যদি খুব কমদাম চেয়ে বসেন তারা ধরে নেবে আপনি কাজের যোগ্য নন। আর বেশি চাইলে খরচের কারনে কাজ দেবে না। শুরুতে নির্দিষ্ট খরচের কাজে হাত দেয়াই ভাল।
বেশি বেশি কাজের চেষ্টা করুন। যত বেশি চেষ্টা করবেন কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। সাধারনত বিনামুল্যে একাউন্ট করলে নিদিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট সংখক আবেদন করা যায়। কিছু ফি দিয়ে সদস্য হলে সেই সুযোগ বাড়ে। কাজ করার সিদ্ধান্তই যদি নিয়ে থাকেন তাহলে কিছু ফি নিয়ে সদস্য হোন। কোন কোন সাইটে পরীক্ষা দিয়ে ভাল করলে বেশি আবেদনের সুযোগ পাওয়া যায়। সেই সুযোগ কাজে লাগান।
এধরনের সাইটে নানাধরনের পরামর্শ দেয়া হয়। ফোরামে বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানান। যতটা সম্ভব এগুলি থেকে জানার চেষ্টা করুন।
যত দিন যাবে আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়তে থাকবে।
বাংলাদেশে যারা কাজ করেন তাদের প্রচলিত একটি পদ্ধতি হচ্ছে মানিবুকারস ব্যবহার করা। মানিবুকারস (www.moneybookers.com) পে-পলের মত একই ধরনের সেবা দেয়। তাদের সেবার মানও উন্নত (পে-পলের বিরুদ্ধে নানারকম অভিযোগ রয়েছে)। যেহেতু অনেকেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করছেন সেহেতু এটাই ভালভাবে জেনে নিন।
আপনার প্রয়োজন স্থানীয় একটি ব্যাংক একাউন্ট। ব্যাংকের কাছে আগে জেনে নিন তারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কি-না। ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে এই পদ্ধতিতে টাকা উঠানো যায় এটুকু নিশ্চিত করতে পারি।
প্রয়োজন একটি ইমেইল এড্রেস।
এটুকুই। এরপর মানিবুকারস সাইটে গিয়ে নিজের তথ্য দিয়ে নামে একটি একাউন্ট খুলুন। আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনের জন্য সুইফট কোড নামে একটি কোড ব্যবহার করা হয়। ডাচবাংলা ব্যাংকের জন্য এই কোড DBBLBDDH। অন্য ব্যাংক হলে সেই ব্যাংকের কোড জেনে নিন। এই কোড ব্যবহার করে ব্যাংক একাউন্ট যোগ করুন।
মানিবুকারস এ একাউন্ট তৈরীর কোন খরচ নেই।
টাকা জমা হলে মানিবুকারস ওয়েব সাইটের উইথড্র থেকে টাকা উঠানোর চেষ্টা করুন। আপনাকে ঠিকানা/ব্যাংক ভেরিফাই করতে বলবে। সেটা করুন। অথবা, ভেরিফিকেশন ছাড়া ১৫ ডলার উঠানো যায়, কাজেই ১৫ ডলারের নিচে উঠান। তারা আপনার ব্যাংকে ভেরিফিকেশন কোড পাঠাবে।
আপনার ব্যাংকে এই তথ্য যেতে ১ থেকে ২ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। ব্যাংকে গিয়ে আপনার কোডটি নিন এবং মানিবুকারস এর সাইটে গিয়ে সেটা ব্যবহার করুন।
এরপর প্রতি ৯০ দিনে ২০০০ ডলারের বেশি পর্যন্ত গ্রহন করতে পারবেন এই একাউন্ট ব্যবহার করে। অর্থের পরিমান যাই হোক, মানিবুকারস প্রতি লেনদেনের জন্য ২.১৬ ডলার কেটে রাখবে সার্ভিস চার্জ হিসেবে। এটা সামান্যই।
অর্থ গ্রহনের আরেকটি সহজ পথ হচ্ছে এলার্ট-পে। এখানে খুব সহজে একাউন্ট করা যায়, সেখানে টাকা জমা হলে ব্যাংক থেকে উঠানো যায় বা ইন্টারনেটে খরচ করা যায়। একাউন্ট করার নিয়ম জেনে নিন এখানে।
প্রতিকুলতা যতই থাক, কাজ করা সম্ভব। চাকরী বা ব্যবসার চিন্তা করে, অন্যের জন্য অপেক্ষায় সময় নষ্ট না করে নিজেই কিছু করার চেষ্টা করুন। অনেকেই করছে।






0 comments:
Post a Comment